দুর্ঘটনায় ৫ বন্ধুর মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোপালগঞ্জ
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:৫৭ অপরাহ্ণগোপালগঞ্জ প্রতিনিধি।।
সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ গোপালগঞ্জ। রোববার রাতে খুলনার রূপসা সেতু এলাকায় প্রাইভেটকার ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে তারা নিহত হন। এই পাঁচ বন্ধুর মৃত্যুর খবর গোপালগঞ্জে পৌঁছলে সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতদের বাড়িতে চলছে মাতম।
নিহত পাঁচজন হলেন- গোপালগঞ্জ শহরের সবুজবাগ এলাকার অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব হাসান বাবু, একই এলাকার মৃত আলাউদ্দিন শিকদারের ছেলে ও সদর যুবলীগের সহ-সভাপতি এসএম সাদিকুল আলম সাদিক, শহরের থানাপাড়ার গাজী মিজানুর রহমান হিটুর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রবৃত্তি বিয়ষক সম্পাদক ওয়ালিদ মাহমুদ উৎসব, শহরের কুয়াডাঙ্গা এলাকার রসুলপাড়ার আলমগীর হোসেন মোল্লার ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সাজু আহমেদ এবং চাঁদমারীর ওয়াহিদ গাজীর ছেলে ও জেলা ছাত্রলীগের সদস্য অনিমুল ইসলাম গাজী।
সাদিক বাদে বাকি সবাই গোপালগঞ্জ সরকারি বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
সোমবার সকালে পাঁচ বন্ধুর লাশ গোপালগঞ্জ শহরের বাড়িতে পৌঁছলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাড়িতে ছুটে যান।
স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই পাঁচ বন্ধু বিভিন্ন সময় একসঙ্গে ঘুরে বেড়াতেন। রাজনীতি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে সক্রিয় ছিলেন তারা। রোববার নতুন কেনা প্রাইভেটকার নিয়ে তারা খুলনায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথেই ঘটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা।
খুলনার লবণচরা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম সোমবার বিকেলে বলেন, প্রাইভেটকারটি খুলনা মহানগরীর জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে রূপসা সেতু দিয়ে গোপালগঞ্জে ফিরছিল। এ সময় বিপরীত দিক থেকে সিমেন্ট বোঝাই একটি ট্রাক আসছিল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রাইভেটকারটি রং রুটে ঢুকে পড়লে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনার সময় গাড়ির ভেতরে ৪টি এবং রাস্তায় একটি মরদেহ পড়ে ছিল। রাস্তায় মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে আমরা ভেবেছিলাম, মানসিক ভারসাম্যহীন কোনো পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরে জানা গেছে, নিহত পাঁচজনই প্রাইভেটকারের যাত্রী এবং সবার বাড়ি গোপালগঞ্জ। কোনো কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রং রুটে ঢুকে পড়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। ট্রাকটি জব্দ করা হলেও চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে।
দুর্ঘটনায় প্রাইভেটকারটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ভেতর থেকে লাশগুলো বের করার কোনো উপায় ছিল না। পরে ফায়ার সার্ভিসের বয়রা ও টুটপাড়া ইউনিটের দুটি দল উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। তারা গাড়ি কেটে সবার মরদেহ বের করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিয়ে যায়। সোমবার খুলনা জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন বাদ জোহর গোপালগঞ্জে শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে তাদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জানাজায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চৌধুরী এমদাদুল হক, সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে জেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে নিহতদের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে গোপালগঞ্জ মার্কাস মহল্লা, গেটপাড়া, সদর উপজেলার ফকিরকান্দি ও ডুমদিয়া গ্রামের কবরস্থানে পাঁচজনের লাশ দাফন করা হয়।
সোমবার বাদ আসর সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ মসজিদে নিহতদের স্মরণে সভা ও রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত করা হয়। স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজের অধ্যক্ষ মতিয়ার রহমান।
যুবলীগ-ছাত্রলীগের এই পাঁচ নেতার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গোপালগঞ্জ সদর আসনের এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জেলা আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন; বিভিন্ন রাজনৈতিক, সমাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমজীবী সংগঠনের নেতারা গভীর শোক প্রকাশ এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদ মাহামুদ বাপ্পী বলেন, তাজা পাঁচটি প্রাণ ঝরে গেল! তারা আমাদের স্বজন; আমাদের ভাই। তাই শোকে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। তারা রাজনীতির পাশাপাশি সমাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত ছিল। তাদের মৃত্যুতে এখানে ছাত্রলীগ ও যুবলীগে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান বলেন, পাঁচ ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক ছিল। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য রাজনীতি করত। তাদের মধ্যে দেশ ও জাতির জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা তাদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সড়কে মানুষের জীবন নিরাপদ করতে সরকার, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পাশাপাশি আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে আগামীকাল মঙ্গলবার বাদ আসর নিহত ৫ নেতার স্মরণে গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ব্যাংকপাড়ার দলীয় কার্যালয়ে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।